মানবতার শিল্পী [পর্ব ২] (সময় হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানবতার শ্লোগান দেওয়ার)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ ৩০ মে, ২০১৮, ১০:৪১:১৫ সকাল

(ক্লাস,কাজ,এক্সাম,মানসিক অসুস্থতা সহ বিভিন্ন কারণে ২য় পর্বটি শেষ করতে একটু সময় লেগে গেল। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু বাইরে হাঁটতে গেল মনছুর মাষ্টার। রাতের নিস্তব্ধতা মাষ্টারের খুব পছন্দ। এই নিস্তব্ধ রাতে বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা বেলী ফুলের গাছটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল......

"সকাল হোক বা রাত এই গাছ পুরো পরিবেশকে তার নিজস্ব সুগন্ধযুক্ত ফুলের সুগন্ধ দিয়ে মাতিয়ে রাখে।

(মনে পড়ে গেল রণজিৎ রায়ের সেই গাছ নিয়ে ছোট ব্যাখ্যাটি।) আসলেইতো গাছ কোন স্বার্থ ছাড়া আমাদের উপকার করে যাচ্ছে। বিনিময়ে হয়তো আমরা মাঝে মাঝে একটুআধটু পানি দিয়ে থাকি।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমে যখন বাহির হতে এসে গিন্নিকে ঠান্ডা পানি দেওয়ার জন্য চিৎকার করে বলতাম তখন কি এই স্বার্থত্যাগী বন্ধুটির কথা আমার মনে পড়েছিল? "

" রাত অনেক হয়েছে। মেঘের গর্জন শুনা যাচ্ছে। ঘুমাতে আসুন" রাবেয়া বেগম তার স্বামীকে ভালবাসার সহিত ডাকিল।

মনছুর মাষ্টার তার ভাবনা চিন্তা ছেড়ে হঠাৎ অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসল তার স্ত্রীকে " গ্রীষ্মকালে তুমি এই গাছটিতে পানি দিয়েছিলে?"

"মাঝে মাঝে দিয়েছিলাম " রাবেয়া বেগমের উত্তরে মনছুর মাষ্টার স্বস্তি ফিরে পেলেন।

"মাঝে মাঝে গাছগুলোতে একটু পানি দিও। আমিও দিব। এদের জন্য আমরা বেঁচে আছি। গ্রীষ্মকালের গরমে এদের কি অবস্থা হয় তা কেবল স্রষ্টাই জানে! " গাছের প্রতি গভীর ভালবাসা নিয়ে গিন্নীকে কথাটি বললেন।

"গ্রীষ্মকালে এত গরম লাগে কেন? " ছোট মেয়ের মত প্রশ্ন করে বসলেন রাবেয়া।

"পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। এ ঘোরার সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে সামান্য হেলে থাকে। পৃথিবী আবার তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে।

এভাবে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ কখনও সূর্যের কাছে চলে যায়, আবার কখনও উত্তর গোলার্ধ। যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সে অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো ও তাপ পায়। আর তখন সেই অংশে বেশি গরম পড়ে।" ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের যেভাবে পড়ান ঠিক সেভাবে বলে গেলেন মনছুর মাষ্টার।

যদিও কথাগুলো রাবেয়া বেগমের মাথার উপর দিয়ে গেল বলে মনে হল মনছুর মাষ্টারের। রাবেয়া বেগম কোনমতে মাধ্যমিক পাসটা করেছেন। আর্থিকভাবে রাবেয়া বেগমের পরিবার দুর্বল থাকায় বেশিদূর পড়া হয়নি।

প্রতিদিনের ন্যায় সকালের কাজকর্ম সেরে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মনছুর মাষ্টার। আজ ছাতাটা নিয়ে বের হলেন। রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এখনো আকাশে মেঘ করে আছে। মনছুর মাষ্টারের বৃষ্টি খুব পছন্দ। যদি আজ স্কুল না থাকত তাহলে নির্ঘাত বারান্দায় চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চেয়ারে আরাম করে বসে জীবনানন্দ দাশ না হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অথবা কবি কাজী নজরুল ইসলামের বই পড়তেন।

মাঝপথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হল। ছাতাটা মেলে হাঁটতে লাগলেন। চিন্তা করতে লাগলেন গাছ নিয়ে। আজ গাছগুলো কতই না আনন্দে আছে। তাদের জন্য স্রষ্টা যতেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করেছেন।

স্কুলে এসে উপস্থিত হতে দেখলেন রণজিৎ রায় ভেজা শরীর নিয়ে এক দুরবস্থার মধ্যে আছেন।

"কি ব্যাপার আপনি ছাতা নিয়ে আসলেন না কেন? "

মনছুর মাষ্টার ছাতা বন্ধ করতে করতে বললেন।

"আর বলিয়েন না, আমি ভাবছিলাম বৃষ্টি হবে না। "মাথা মুছতে মুছতে বললেন রণজিৎ রায়।

একটু অবাক হয়ে মনছুর মাষ্টার বললেন

"কেন আকাশে মেঘ ছিল আর তাছাড়া মেঘের গর্জন শুনে বুঝতে পারার কথা যে আজ বৃষ্টি হবে।"

"একটা প্রবাদবাক্যের উপর ভরসা করে এই অবস্থা। 'যত গর্জে তত বর্ষে না'। এখন দেখি ঠিক তার উল্টোটা হল। " হাসতে হাসতে বললেন রণজিৎ রায়।

মনছুর মাষ্টারও হাসতে লাগলেন।

ক্লাসের দিকে রওনা হলেন মনছুর মাষ্টার। সপ্তম শ্রেণীর গণিত ক্লাসটা সর্বপ্রথম নিয়ে থাকেন মনছুর মাষ্টার। ক্লাসে প্রবেশ করতে সকল ছাত্র-ছাত্রী দাঁড়িয়ে সম্মান জানালেন তাদের গণিত শিক্ষককে। কুশল বিনিময় শেষে ২য় অধ্যায়ের : সমানুপাত ও লাভ-ক্ষতি হতে একটা অংক ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে লাগলেন। ক্লাসরুমের দরজার সামনে থেকে স্যার আসতে পারি বলে জোড়া গলার শব্দ ভেসে আসল মনছুর মাষ্টারের কানে। তাকিয়ে দেখলেন শুকান্ত আর আলতাফ দাঁড়িয়ে আছেন।

কি ব্যাপার এত দেরী কেন?

"স্যার ছাতা নিয়ে আম্মু বাইরে গিয়েছিল তাই অপেক্ষা করতে করতে একটু দেরি হয়ে গেল।" সুকান্ত ঝটপট করে উত্তর দিল।

তা আলতাফের দেরি হল কেন?

"স্যার আমরা দুজন একসাথে আসি। তাই আমিও সুকান্তের আম্মুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। " কিছুটা ভয়ভীতি নিয়ে জবাব দিল আলতাফ।

মনছুর মাষ্টার কি যেন চিন্তা করে তাদের ভেতরে আসতে বলল।

আলতাফ আর সুকান্ত দুজন ভাল বন্ধু। পড়ালেখায়ও দুজন ভাল। সবসময় একসাথে যাওয়া আসা, একসাথে উঠা বসা, একসাথে ঘোরা ফেরা করে থাকে। এটা অবশ্যই মনছুর মাষ্টার জানেন।

ক্লাস শেষ হতে মনছুর মাষ্টার অফিসকক্ষে গিয়ে আরামে বসে চা খেতে লাগলেন। পরবর্তী ক্লাস ৪৫ মিনিট পর। বাইরে বৃষ্টি পড়তেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবলেন তার ছাত্রদের নিয়ে। শুকান্ত আর আলতাফের বন্ধুত্ব কতদূর এগুবে? সমাজের যেই রীতিনীতি তা কি তাদের বন্ধুত্বকে আলাদা করতে সক্ষম হবে?তারা কি জানে না উভয়ের ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন? যদি জেনে থাকে তাহলে কেন তারা বন্ধুত্ব করল! ভাবতে ভাবতে কখন যে চা শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারল না মনছুর মাষ্টার। তবে মনছুর মাষ্টার বুঝতে পারলেন আলতাফ আর সুকান্তের বন্ধুত্বের মধ্যে কোন ধর্ম নেই। তাদের বন্ধুত্ব আলাদা একটা ধর্ম। যে ধর্ম তাদের এক করেছে সেটা হল ভালবাসার ধর্ম, বন্ধুত্বের ধর্ম। একে অপরের প্রতি ভালবাসা আর শ্রদ্ধা হতে এই ধর্মের উৎপত্তি। এটাও স্রষ্টার সৃষ্টি। যিনি এই অবুঝ বালকদের মধ্যে জাত ধর্মের ভেদাভেদ না রেখে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যা হয়তো বয়সের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায় অথবা সঠিক জ্ঞানের অভাবে হারিয়ে যায়। বন্ধুত্বের কোন জাত নেই, নেই কোন ধর্ম। এতটুকু বুঝতে মনছুর মাষ্টারের দেরী হল না বটে।

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোনরকমে ক্লাসগুলো শেষ করে বাড়ি এসলেন মাষ্টার সাহেব। দিনের অধিকাংশ সময় স্কুলে চলে যায় বাড়িটা শুধু রাতে নিদ্রা যাওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকেন।

এভাবে চিন্তা ভাবনা আর প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে সময় অতিবাহিত হতে লাগল। পৃথিবীতে একমাত্র সময় যে নিজ গতিতে চলতে থাকে। যে কখনো পেছন ফিরে দেখে না।ইউক্টোসেকেন্ড, ফেমটোসেকেন্ড,ইন্ডিকশন,মিলেনিয়াম,বিশ্বতত্ত্বীয় দশক দিয়ে যতই হিসাব নিকাশ করা হোক না কেন, না পারবে সময়কে থামাতে না পারবে চলে যাওয়া সময়কে ফিরিয়ে আনতে। যদিও মানুষ টাইম মেশিন তৈরির স্বপ্ন দেখে। যাক এসব কথা গল্পে ফিরে যাওয়া যাক।

একদিন মনছুর মাষ্টার লক্ষ্য করলেন সুকান্ত আর আলতাফের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এই বিচ্ছেদ মনছুর মাষ্টারের অসহ্য লাগছে। একদিন অফিসে আলতাফকে ডেকে আনলেন।

"কিরে কি হল তুদের? কয়দিন ধরে দেখছি শুকান্ত আর তুই আলাদা আলাদা। "

মনছুর মাষ্টারের প্রশ্নে হঠাৎ আলতাফ কেঁদে উঠল।ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না মনছুর মাষ্টার কেন এই কান্না!

জিজ্ঞাসা করল" কি হল খুলে বল? "

"স্যার শুকান্তদের বাড়ির দিকে কয়েকটা ঘর আছে যেগুলো কালো কালো হয়ে আছে। কয়েকটাতে কেউ থাকে না। আমি একদিন শুকান্তদের ঘরে বসেছিলাম। কৌতূহলবশত আমি শুকান্তকে জিজ্ঞাসা করলাম ঘরগুলো এমন কেন?

ও বলল জানে না। এরপর শুকান্ত তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল।

হঠাৎ শুকান্তের বাবা আমাকে বকাবকি করতে লাগলেন বললেন আমি যাতে তার সাথে চলাফেরা না করি। এরপর থেকে শুকান্ত আমার সাথে কথা বলে না।" ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললেন।

মনছুর মাষ্টার বুঝতে পারছেন না কি বলবে! আলতাফকে যেতে বলে রণজিৎ রায়ের অফিসের দিকে রওনা হলেন।

রণজিৎ রায়ের সামনে বসে মুখ নিচু করে বসে আছেন মনছুর মাষ্টার।

-কি ব্যাপার কি হল আপনার?

-কিছু না পরে বলব। চা খাবেন?

-হুম চলেন।

এই বলে দুজন ক্যান্টিনের দিকে রওনা হলেন।

চুপচাপ চা শেষ করে রণজিৎ রায়কে বললেন

আমার ছুটি দরকার। শরীর খারাফ মনে হচ্ছে।

ঠিক আছে আপনি বাড়ি চলে যান। রণজিৎ রায় বুঝতে পারলেন মনছুর মাষ্টার মানসিকভাবে অসুস্থবোধ করছেন।

ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মনছুর মাষ্টার।

মাঝপথে হঠাৎ বৃষ্টি। ছাতা থাকা সত্ত্বেও খুললেন না মনছুর মাষ্টার। জীবনানন্দ দাশের "আঁধার" কবিতাটি অস্পষ্ট ধ্বনিতে উচ্চারিত করতে লাগল -

"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,

যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;

যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই

পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি

এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়

মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা

শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।"

মনছুর মাষ্টারের মনে পড়ে গেল ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বরের কথা। যেদিন ভারতে বাবরি মসজিদ ভাংচুর করেন ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়। অনেক আলোচিত একটি ঘটনা। এই হামলার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে উঠে। সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি বহন করে যাচ্ছে শুকান্তদের বাড়ির পাশের আগুনে দগ্ধ হওয়া ঘর সমূহ।

মনে পড়ে গেল সেই সময়ে বাংলার মাটিতে অসহায় হিন্দুদের চেহারা। তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে কি পেয়েছিল সেদিনের মানুষগুলো? কি অপরাধ ছিল তাদের? অন্যজনের অপরাধের শাস্তি কেন পেল তারা?

একবারও কি চিন্তা করল না ধর্ম এক হওয়া মানে প্রতিটি মানুষের মনুষ্যত্ব এক হওয়া না? ধর্ম কোন ব্যক্তির দূষ বহন করে না এটা কি তাদের জানা ছিল না?

এসব চিন্তা করতে করতে বাড়ি এসে গেলেন। রাবেয়া বেগম তার স্বামীর এই অবস্থা দেখে দৌড়ে স্বামীর কাছে আসলেন।

-আপনার এই অবস্থা কেন? আপনি ছাতা খুললেন না কেন?

-আজ বৃষ্টিতে খুব ভিজতে ইচ্ছে হল তাই।

(গম্ভীর গলায় উত্তর দিয়ে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন)

রাবেয়া বেগম তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে স্বামীকে শরীর মুছে নিতে বলল।

-চা হবে?

-একটু অপেক্ষা করুন। নিয়ে আসছি।

(এই বলে চা আনতে চলে গেল)

গভীর রাতে হালকা জ্বর অনুভব করছেন মনছুর মাষ্টার। সকাল ৮টার দিকে ঘুম ভাঙল মনছুর মাষ্টারের। ঘড়ির দিকে চুখ পড়তেই বিচলিত হয়ে পড়লেন। সকালের নামাজটা পড়তে পারলেন না। দুঃখ নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারলেন তিনি অসুস্থ। রাবেয়া বেগম দৌড়ে এসে বললেন

- শুয়ে থাকুন। আমি ডাক্তারের কাছে খবর পাঠিয়েছি।

ডাক্তার এসে মনছুর মাষ্টার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারলে জ্বর হয়েছে। তাও আবার ১০২ ডিগ্রি। কিছু ঔষধপত্র ও বিছানা ছেড়ে না উঠার তাগিদ দিয়ে বিদায় নিলেন ডাক্তার।

আজ আর স্কুলে যাওয়া হল না মনছুর মাষ্টারের। অসুস্থ শরীর যতটুকু কষ্ট দিচ্ছে ঠিক তার চেয়ে বেশী কষ্ট দিচ্ছে গিন্নির বকাবকি। অপরাধ শুধু একটাই ছাতা থাকা সত্ত্বেও কেন খুললেন না!

বিকালবেলায় হঠাৎ গিন্নি এসে খবর দিয়ে গেলেন রণজিৎ রায় আসতেছেন। শুনে কিছুটা ভাল লাগল। বিছানা থেকে হালকা একটু উঠে বসলেন মনছুর মাষ্টার।

ঘরে প্রবেশের সময় হাসিমুখ থাকলেও মনছুর মাষ্টারকে দেখে সেই মুখ মলিন হয়ে গেল রণজিৎ রায়ের।

- হঠাৎ জ্বর আসল কেন আপনার?

মনছুর মাষ্টার কিছু বলার আগেই রাবেয়া বেগম বলে উঠলেন

- হঠাৎ না। উনি গতকাল ছাতা থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আসছেন।

- কি ব্যাপার বলুনতো! কাল থেকে দেখছি আপনার মন খারাফ।

উত্তর দেওয়ার আগে গিন্নিকে চা পানি আনতে বললেন। তারপর আলতাফের ব্যাপারে সব কথা খুলে বললেন।

রণজিৎ রায় মৃদু একটা হাসি দিয়ে বললেন

- মনছুর সাহেব এসব নিয়ে বেশী চিন্তা করবেন না।

- চিন্তা না করে কিভাবে থাকব বলেন!

- এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘৃণা করাটা ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করে। যা না করলে ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করে থাকেন কিছু মানুষ। মসজিদ কিংবা মন্দির ভেঙে ধর্ম প্রতিষ্টা করা যায় না। ধর্ম প্রতিষ্টা করতে হলে মানুষকে ভালবাসতে হবে। ভালবাসতে হবে স্রষ্টার সৃষ্টিকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সেই মানুষগুলো মসজিদ ভেঙে যে অপরাধ করেছিল ঠিক তেমনি বাংলাদেশে হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে অপরাধ করেছে কিছু মুসলিম মানুষ।

আমাদের সমস্যা হচ্ছে যখন আমরা দেখি কোন একটি সম্প্রদায়ের ব্যক্তি কোন একটি অপরাধ করে থাকে তখন আমরা ঐ ব্যক্তিকে অপরাধী না বলে তার জাত কিংবা গুষ্টিকে অপরাধী বানিয়ে ফেলি। এই যেমন মনে করুন বাবরি মসজিদ হামলা। যেখানে কিছু হিন্দু ব্যক্তির সংঘঠিত অপরাধ পুরো হিন্দু জাতিকে অপরাধী বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ঠিক তেমনি ISIS এর সংঘঠিত কর্মকান্ডের দায়ভার এসে পড়ে পুরো মুসলিম জাতির উপর। অথচ এখানে কিছু নির্দিষ্ট পথভ্রষ্ট লোক ছাড়া আর কেউ জড়িত নেই। তাদের অপরাধকে আমরা ধর্মের সাথে জড়িয়ে ধর্মকে অপমান ছাড়া অন্যকিছু করছি না। ধর্ম কখনো এসব সমর্থন করে না।

রাবেয়া বেগম চা নিয়ে আসলেন। মনছুর মাষ্টার অসুস্থ শরীর নিয়ে অতিথিসেবা করতে চাইলে রণজিৎ রায় বাঁধা দিলেন। নিজে উঠে চায়ের কাপ হাতে নিলেন।

- আমার মনে হয় না আপনি আপনি কালকেও স্কুলে আসতে পারবেন না। কয়েকদিন রেস্টে থাকেন। সুস্থ হলে আসিয়েন।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন। চা শেষ করে রণজিৎ রায় ঘর হতে বাহিরে এক পা রেখে হঠাৎ পেছনে ফিরে মনছুর মাষ্টারকে জিজ্ঞাসা করলেন

- আপনি কি চান?

- আমি মানবতার ধর্ম চাই। এমন একটি সমাজ গঠন করতে চাই যেখানে শত ধর্ম থাকার পরও মানুষ একে অপরকে ভালবাসবে।

আবেগময় হয়ে কথাগুলো বললেন মনছুর মাষ্টার।

- আপনার মত করে বলছি, ইনশাআল্লাহ একদিন আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে।

মৃদু হাসি দিয়ে কথাটি বলে প্রস্থান করলেন রণজিৎ রায়।

চলবে..................

বিষয়: বিবিধ

৮৬৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385438
৩০ মে ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাল লাগল। লেখাটা দু বার হয়েছে।ধন্যবাদ।
385439
৩০ মে ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ লিখেছেন : আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটা আমার অজান্তে হয়ে গেছে।
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File